ইন্টারনেট সেবার মূল্য কমলে ও কত? কার্যকর কবে থেকে?


এখনো নির্ধারণ হয়নি ইন্টারনেট সেবার মূল্য

 ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন খাতে কত ব্যয়, তা জানতে গত বছর জুনে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ইন্টারনেট সেবার দাম নির্ধারণে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সুপারিশের ভিত্তিতে এ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হলেও ইন্টারনেটের সেবার দাম নির্ধারণে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিটিআরসি সূত্রমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কস্ট মডেলিংয়ের ভিত্তিতে টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানে প্রযোজ্য বিভিন্ন ধরনের ব্যয় যাচাই করে কস্টমডেল করা হয়। এ ব্যয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা যোগ করে সুলভে গ্রাহক পর্যায়ে সেবাটি পৌঁছে দিতে মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
ইন্টারনেট সেবার মূল্য নির্ধারণে ২০১৩ সালে কস্ট মডেলিংয়ের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিটিআরসি। এরপর ২০১৬ সালে আরো একবার এ উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। পরবর্তীতে গত বছরের ২৭ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির সভায় এক মাসের মধ্যে কস্ট মডেলিং সম্পন্ন করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে ২০০৮ সালে ভয়েস কলের মূল্য নির্ধারণে কস্ট মডেলিং করে বিটিআরসি। আইটিইউর পরামর্শকের তৈরি ওই কস্ট মডেলিংয়ের ভিত্তিতে ভয়েস কলের সর্বনিম্ন ট্যারিফ ২৫ পয়সা ও সর্বোচ্চ ট্যারিফ ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা এখন কার্যকর রয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার মূল্য নির্ধারিত না থাকায় একই গতির সংযোগ বিভিন্ন দামে নিতে হচ্ছে। এছাড়া অনুমোদনহীন অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে গ্রাহকদের সংযোগ দিচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তির পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে ইন্টারনেট সেবার মূল্যসীমা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেট সেবার মূল্য নির্ধারণে এরই মধ্যে কস্ট মডেলিং সম্পন্ন হয়েছে। কস্ট মডেলিংয়ে পাওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিগগিরই সেবাটির মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। গ্রাহক পর্যায়ে সেবাটির মূল্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
ইন্টারনেটের দামের ক্ষেত্রে খাতটিতে বিদ্যমান ভ্যাট ও ট্যাক্স হার ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বর্তমানে সেলফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট গেটওয়ে অপারেটরগুলো ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করছে। এছাড়া সেলফোন অপারেটররা ১ শতাংশ সারচার্জ, আয়ের ভাগাভাগির অংশ হিসেবে বিটিআরসিকে সাড়ে ৫ শতাংশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে ১ শতাংশ দিয়ে থাকে।
দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সিংহভাগই মূলত সেলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে দেশে ইন্টারনেট সেবার সংযোগ ৮ কোটি ৫৯ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সেলফোন অপারেটরের ইন্টারনেট সংযোগ ৮ কোটি, আইএসপি ও পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) অপারেটরদের ৫৬ লাখ ৮০ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের ৮৭ হাজার সংযোগ রয়েছে।
গত এক দশকে দেশে ব্যান্ডউইডথের চাহিদা বেড়েছে ৬০ গুণেরও বেশি। ২০০৮ সালে এ চাহিদা ছিল ৭ দশমিক ৫ গিগাবিটস পার সেকেন্ড (জিবিপিএস)। বর্তমানে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ জিবিপিএসের বেশি। এ সময়ে ব্যান্ডউইডথের দাম কমেছে কয়েক দফায়। ২০০৮ সালে দেশে ব্যান্ডউইডথের দাম ছিল ৭২ হাজার টাকা। বর্তমানে ১ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথের সর্বোচ্চ দাম ৫৬২ টাকা।
মূলত ব্যান্ডউইডথের মূল্য হ্রাস, ইন্টারনেট সেবার গ্রাহক বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম চালুর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়া সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজি ও ফোরজি সেবার গ্রাহক বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
ইন্টারনেট সেবার মূল্য কমলে ও কত? কার্যকর কবে থেকে?  ইন্টারনেট সেবার মূল্য কমলে ও কত? কার্যকর কবে থেকে? Reviewed by Admin on June 27, 2018 Rating: 5
Powered by Blogger.