Results for বিজ্ঞান

VPN এর ওপর সাধারন আলোচনা

October 31, 2018

VPN শব্দটার সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। তবে শুধু নামের সাথেই পরিচিত, কিন্তু ইহা যে কি জিনিস তা অধিকাংশ মানুষই জানে না। আগের একটা পোস্টে আমি ভিপিএন নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম তো আজকেই সেটা নিয়ে লিখতে বসলাম।
আজকে আমরা VPN কি, এর কাজ কি- এসমস্ত বিষয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করবো তো চলুন শুরু করা যাক।
VPN এর পূর্ণ রূপ হল- Virtual Private Network. সোজা বাংলায় এর সংজ্ঞা দাড়ায়, VPN হল একটা কাল্পনিক ‘Tunnel’ যার মাধ্যমে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। এই ‘Tunnel’ বা সুড়ঙ্গের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই, এটি দিয়ে মূলত কাল্পনিক একটা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বোঝানো হচ্ছে যেটি দিয়ে ইন্টারনেটে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।আমরা এখন ‘নিরাপদ’ keyword টির উপর ফোকাস করবো।
ইন্টারনেট মূলত উন্মুক্ত তথ্য আদান প্রদানের জায়গা। যেহেতু এটি পাবলিক নেটওয়ার্ক অর্থাৎ, পৃথিবীর সবাই সংযুক্ত তাই এখানে সরাসরি তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্যের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবার একটা ঝুঁকি আছে। এই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার নিরাপদ পদ্ধতিই হল VPN। এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করার জন্য ইন্টারনেটে একটি কাল্পনিক সুড়ঙ্গ তৈরী হয়।
VPN-এর শ্রেণীবিভাগ:VPN-কে বিভিন্নভাবে classify করা যায়। যেমন- PPTP VPN, Site to Site VPN, L2TP VPN, Remote Access VPN, IPsec, SSL, MPLS VPN, Hybrid VPN ইত্যাদি।
কিভাবে VPN কাজ করে? একটি VPN সার্ভারে VPN ক্লায়েন্ট একটি বাহ্যিক নেটওয়ার্ক ইন্টারফেসের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারেন। VPN-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করার জন্য ইন্টারনেটে একটি কাল্পনিক সুড়ঙ্গ তৈরী হয় (যেটা আমরা আগেই বলেছি)। এই পদ্ধতিতে তথ্য encrypted অবস্থায় আদান-প্রদান করা হয়, ফলে তথ্যগুলো সুরক্ষিত থাকে। VPN এর জন্য প্রাইভেট নেটওয়ার্কে একটা VPN সার্ভার থাকে এবং ব্যবহারকারীর পিসিতে VPN ক্লায়েন্ট কনফিগার থাকে। যখন কোন ব্যবহারকারী VPN এর মাধ্যমে তার প্রাইভেট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে চাইবে প্রথমে তার পিসিতে ইন্টারনেট কানেকশন নিশ্চিত করতে হবে এর পর VPN ক্লায়েন্টের মাধ্যমে VPN সার্ভারে লগিন করবে। লগিন করার পর যদিও ব্যবহারকারী তার নেটওয়ার্ক থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে তারপরেও সে প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সব সুযোগ সুবিধাগুলো পাবে।
VPN-এর সুবিধাগুলো কি কি?
১। VPN ব্যবহার করার অর্থ হল আপনি ডাটা নিরাপদে আদান প্রদান করতে পারছেন।
২। VPN ব্যবহার করলে আপনার অবস্থান কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না। (সব ক্ষেত্রে না ভিপিএন ও কিন্তু পুরোপুরি নিরাপদ না)
৩। IP address (Internet Protocol address) হাইড করে রাখে। অর্থাৎ, হ্যাকারদের কবলে পড়ার সম্ভাবনা নাই।
৪। আপনার ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী আইপিএস থেকে নেটের ফুল স্পিড পাবেন।
৫। VPN দিয়ে আপনি আইএসপি তে ব্লক করা সাইট ভিজিট করতে পারবেন। যেমন ধরেন, যদি ইউটিউব আমাদের দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলেও আপনি VPN ব্যবহার করে ইউটিউবে ঢুকতে পারবেন।
৬। এটি নিরাপদ যোগাযোগ এবং ডাটা encrypt করার একটি পদ্ধতি হিসেবে কাজে লাগে। মানে VPN আপনার মেশিনকে একটি ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে এবং আপনার পাঠানো সব data দ্রুততার সঙ্গে encrypt করে ফেলে অর্থাৎ public domain থেকে লুকিয়ে রাখে এবং এটা আপনার browsing history-র কোনো ট্র্যাক রাখে না। কাজেই আপনি অনলাইনে পুরোপুরি নিরাপদ।
তবে এত সুবিধার পরেও VPN-এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। এর প্রধান অসুবিধা হচ্ছে এটি আপনাকে টরেন্ট ফাইল ডাউনলোডের সুবিধা দেবে না এবং এটি সম্পূর্ণ ইন্টারনেট নির্ভর।VPN সার্ভিস ফ্রি কিংবা প্রিমিয়াম হতে পারে। যদিও অধিকাংশ VPN সার্ভিসের ক্ষেত্রেই টাকা গুণতে হয়। তবে কিছু জনপ্রিয় ফ্রি VPN সার্ভিস রয়েছে, যা দিয়ে আপনি প্রিমিয়ামের কাছাকাছি সুবিধা পাবেন। যেমন- ProXPN, Hotspot Shield, Cybershost, SecurityKiss, SpotFlux ইত্যাদি।
এত কিছুর পরও পুরোপুরি জোর দিয়ে বলা যায়না যে ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনি পুরোপুরি নিরাপদ থাকবেন। আমি জোর দিয়ে কোনো কিছুই বলবোনা, কারন অনেক এডভান্সড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এখন যার ফলে আপনি এডভান্সড লেভেল এর কোনো হ্যাকার বা সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন এর চোখ ফাকি দিতে পারবেন না। আমি সবসময় একটা জিনিসের উপর বিশ্বাস করি যে ইন্টারনেটে কোনো কিছুই বা কেউই নিরাপদ না। সুতরাং যাই করেন না কেনো সবই নিজ দায়িত্বে বুঝে শুনে করবেন।

VPN এর ওপর সাধারন আলোচনা VPN এর ওপর সাধারন আলোচনা Reviewed by Admin on October 31, 2018 Rating: 5

ফ্রি অ্যাপস থেকে ডেভেলপাররা কীভাবে টাকা আয় করে থাকেন

June 28, 2018
https://assets.roar.media/assets/d4BpiuqdOTqwuGiz_50386-woman-money-flying-smartphone.1200w.tn-picsay.jpg?w=1080

ফ্রি অ্যাপস থেকে ডেভেলপাররা কীভাবে টাকা আয় করে থাকেন 


বর্তমানের স্মার্টফোনগুলি অত্যধিক জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো এগুলোর জন্য রয়েছে ব্যবহারযোগ্য প্রচুর অ্যাপস। স্মার্টফোনের প্লাটফর্ম অনুযায়ী প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষণীয়, সঙ্গীত বিষয়ক, খেলাধুলা, দরকারি টুলস, এডিটিং ইত্যাদি বিষয়ক লক্ষাধিক অ্যাপস। এই যে চমকপ্রদ ও কাজের এতো সফটওয়্যার, এগুলোর অধিকাংশই ডাউনলোড করে ফোনে ব্যবহার করা যায় একদম বিনামূল্যে। প্লে স্টোরের প্রায় ৭০ শতাংশ অ্যাপসই যে কেউ বিনামূল্যে তার স্মার্টফোনটিতে ইন্সটল করতে পারেন।


কিন্তু এই ফ্রি অ্যাপসগুলোও ডেভেলপ করে প্রস্তুত করার পেছনে রয়েছে একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারের অক্লান্ত পরিশ্রম। দিনরাত তিনি কাজ করে গিয়েছেন নিজের আকাঙ্ক্ষিত সেই অ্যাপটি প্রস্তুত ও ডিজাইন করে সেটি প্লে স্টোর বা অ্যাপস্টোরে নিয়ে আসতে। তারপর বিভিন্ন বাগ ফিক্স করে নিয়মিত আপডেট দেয়ার কাজটি তো তাকেই করতে হয়। তাহলে এত পরিশ্রম করে একজন ডেভেলপার যে ফ্রি অ্যাপ্লিকেশনটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করছেন সেখান থেকে কি তিনি কিছুই পান না? শুধুই কি নিঃস্বার্থ ভাবে সকলের ব্যবহারের জন্য তিনি সফটওয়্যারটি তৈরি করেছিলেন?
আসল ব্যাপারটি হলো, এই ফ্রি অ্যাপসগুলো থেকেও বিভিন্ন উপায়ে ডেভেলপাররা টাকা আয় করে থাকেন। এমনকি টাকা দিয়ে কিনতে হয় এমন পেইড অ্যাপস থেকে এই বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায় এমন অ্যাপস থেকেই অনেকে বেশি আয় করে থাকেন। আসুন আজকে জানা যাক এই ফ্রি অ্যাপসগুলো থেকে ডেভেলপাররা কিভাবে আয় করে থাকেন!

বিজ্ঞাপন

মোবাইল অ্যাডভার্টাইজিং হলো এখন পর্যন্ত ডেভেলপারদের টাকা আয় করার অন্যতম একটি উপায়। ১০টির মধ্যে ৭টি অ্যাপেই ডেভেলপাররা বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে থাকেন। আর সফটওয়্যারে বিজ্ঞাপন দেখানোর ব্যবস্থা করাটা নিতান্তই সহজসরল একটি উপায়। ডেভেলপারদের শুধু নিজের তৈরি অ্যাপটিতে যেকোনো কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপন যুক্ত করে দিতে হয় এবং তা থেকে তারা প্রতিনিয়ত একটি বিশেষ পরিমাণে অর্থ পেতে থাকেন বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে।

একটি রিপোর্ট থেকে বলা হয়েছে, শতকরা ৩২.৫% সফটওয়্যার নির্মাতারা অর্থ উপার্জনের প্রধান উৎস হিসেবে 'ইন-অ্যাপ অ্যাড' বা মোবাইল বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে থাকেন। বিজ্ঞাপনটি যতবার দেখা হয় ততবার কিছু অর্থ পেয়ে থাকেন তারা। আর বিজ্ঞাপনে দেখানো কোনো অ্যাপ যদি ব্যবহারকারী ইন্সটল করেন তার ফোনটিতে, তাহলে সেখান থেকেও ডেভেলপারটি বিশেষ পরিমাণে অর্থ পান।
বর্তমানে ৪ প্রকারের বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে। সেগুলো হলো ইন্টারস্টিসিয়াল অ্যাডস, ব্যানার বা ডিসপ্লে অ্যাড, ইন-অ্যাপ ভিডিও অ্যাড এবং ন্যাটিভ অ্যাড।
ইন্টারস্টিসিয়াল অ্যাড বা কৌশলগত বিজ্ঞাপন হলো এমন ধরনের বিজ্ঞাপন যা কিছু সময় পর পর ব্যবহারকারীর পর্দায় এসে হাজির হয়। এবং তা পুরো পর্দা জুড়ে বিরাজ করে। ব্যবহারকারী সেই বিজ্ঞাপনে দেখানো বিষয়বস্তুতে ক্লিক করে বা বিজ্ঞাপনটির একদম উপরে ক্রস চিহ্নতে ক্লিক করে তা ফোনের স্ক্রিন থেকে দূর করতে পারেন।

এধরনের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন মেসেজিং এবং কন্টেন্ট অ্যাপস যেমন বিভিন্ন গেইমসে। অর্থাৎ দেখা যায় গেইমের একটি বিশেষ লেভেল অতিক্রম করার পর এধরনের ইন্টারস্টিসিয়াল ফুলস্ক্রিন বিজ্ঞাপন হুট করে এসে হাজির হয়।
ডিসপ্লে বা ব্যানার অ্যাড হলো অপেক্ষাকৃত ছোটো আকারে বিজ্ঞাপন যা মূলত দেখা যায় স্ক্রীনের একদম উপরে বা নিচে। আকারে ছোটো হওয়ায় এগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য কম বিরক্তিকর। তাই অ্যাপটির প্রধান কার্যক্রমে ব্যবহারকারীরা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন কোনোরকমের বাধা ব্যতিরেকেই। তবে এধরনের ব্যানার অ্যাড থেকে অপেক্ষাকৃত কম অর্থ আসে। ইন্টারস্টিসিয়াল অ্যাড বেশ বিরক্তিকর হলেও সেখান থেকে ডেভেলপাররা ব্যানার অ্যাডের তুলনায় অনেক বেশি আয় করে থাকেন।
ইন-অ্যাপ ভিডিও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে দুই ধরনের প্রক্রিয়া দেখা যায়। প্রথমক্ষেত্রে কিছু ভিডিও বিজ্ঞাপন আপনাআপনি চালু হয়ে যেতে দেখা যায় অ্যাপের মাঝেই। আর দ্বিতীয়ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইন-অ্যাপ রিওয়ার্ড হিসেবে বিভিন্ন ভিডিও বিজ্ঞাপন দেখার ব্যবস্থা করে দেয়া থাকে। এগুলোকে বলা হয় রিওয়ার্ডেড ভিডিও। অর্থাৎ কোনো অ্যাপ বা গেইমের বিশেষ কোনো সুবিধা যেমন গেম কারেন্সি বা অতিরিক্ত জীবন বা বিভিন্ন আলাদা সুবিধা আনলক করতে হলে ব্যবহারকারীদের সেই ভিডিওগুলো দেখতে হয়। উভয় ব্যবহারকারী এবং সফটওয়্যার ডেভেলপারের জন্য এটি একটি লাভজনক পদ্ধতি। কারণ ভিডিও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যবহারকারী যেমন বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন তেমনি ডেভেলপাররাও সেই বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে অর্থ পেয়ে থাকছেন।
ন্যাটিভ অ্যাড হলো এমন একটি বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা যাকে আলাদা করে ডিজাইন করে অ্যাপের অন্যান্য ফাংশনের মধ্যেই যুক্ত করে দেয়া হয়। তাই এটিকে আলাদা কোনো বিজ্ঞাপন হিসেবে মনে হয়না। মূলত এধরনের বিজ্ঞাপনে থাকে স্পন্সরকৃত কন্টেন্ট বা ভিডিও যার মূল লক্ষ্যে থাকে কোনো পন্যের প্রচার। এধরনের বিজ্ঞাপন সবচেয়ে কম বিরক্তিকর এবং ব্যবহারকারী চাইলে বিজ্ঞাপনটি দেখতে পারেন বা একদমই এড়িয়ে যেতে পারেন।

ইমেইল মার্কেটিং

যদিও এটি বেশ পুরনো একটি পদ্ধতি তবুও বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো এখনো ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তাদের অ্যাপসগুলো মনেটাইজ করে থাকছে। ব্যবহারকারীদের ইমেইল সংগ্রহ করাও বেশ সহজ এ পদ্ধতিতে। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো আপনার অ্যাপটিতে সাইন আপের সময় ব্যবহারকারীর ইমেইল প্রদান করার ব্যবস্থাটি সংযুক্ত করে দিতে হবে। যাতে আপনি যেকোনো সময় তাদের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারেন এবং নিত্যনতুন আপডেট এবং অফার সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের জ্ঞাত করতে পারেন।
সাইন আপ ব্যতিতও অন্য কিছু উপায়ে ব্যবহারকারীদের ইমেইল সংগ্রহ করা যায়। যেমন ফেইসবুক লগইন। অ্যাপটির ভেতরে ফেইসবুক লগইনের ব্যবস্থা করে দেয়া হলে যখন কেউ অ্যাপটি ফেইসবুকের মাধ্যমে রেজিস্টার করে তখন তার ফেইসবুক প্রোফাইলের ইমেইল আইডিটি ডেভেলপাররা পেয়ে যান। আবার বিভিন্ন থার্ড পার্টি টুলসও রয়েছে শুধু ইমেইল সংগ্রহ করার। এসব SDK গুলোর মাত্র কয়েকটি লাইন যেকোনো অ্যাপের কোডে যুক্ত করে দিলেই সেগুলো ইমেইল সংগ্রহ করার কাজে সক্রিয় হয়ে যায়।
ব্যবহারকারীদের ইমেইল সংগ্রহ করা একদিক দিয়ে উপকারী। কারণ যখন কেউ সেই নির্দিষ্ট অ্যাপটি অনেকদিন থেকে ব্যবহার করছেন না তখন ডেভেলপাররা সেই ব্যবহারকারীকে ইমেইল প্রদান করে বিশেষ বিশেষ অফার, প্রমোশন, আপডেট এবং নিত্যনতুন কন্টেন্ট সম্পর্কে জানান দিতে পারেন।

সাবস্ক্রিপশন

অনেক ফ্রি অ্যাপসগুলোতে দেখা যায় সকল কন্টেন্ট বা সুবিধা আনলক করা থাকেনা। শুধু নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে ফ্রি ব্যবহারকারীদের। আবার কিছু অ্যাপসের সকল সুবিধাই ব্যবহারকারীদের প্রদান করা হয়ে থাকে মাত্র কিছু দিনের জন্য। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সেই দিনগুলো যেমন এক সপ্তাহ বা ১৫-৩০ দিনের ট্রায়াল পিরিয়ড পার হলেই ব্যবহারকারীরা আর বিনামূল্যে সেই অ্যাপটির সকল সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন না। এর পর অ্যাপটির সকল সুবিধা আনলক বা উপভোগ করতে ব্যবহারকারীদের মাসিক বা বাৎসরিক একটা অর্থ প্রদান করার মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করতে হয়।

এধরনের সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতি দেখা যায় মূলত বিভিন্ন ক্লাউড সার্ভিস, ভিডিও এবং অডিও স্ট্রিমিং এবং অনলাইন পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন বিষয়ক অ্যাপসগুলোয়। যেমন জনপ্রিয় অডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ স্পটিফাই (Spotify) তে একমাস আপনি পরিপূর্ণ সকল সুবিধা পাবেন। কিন্তু একমাস পর আপনাকে সেখানে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করে সকল সুবিধা ভোগ করতে হবে।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বৃহৎ পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল উভয়েরই প্রায় ১ মিলিয়ন করে অনলাইন সাবস্ক্রাইবারস রয়েছে।

ইন-অ্যাপ পার্চেজ

ইন-অ্যাপ পার্চেজ হলো একটি অ্যাপের মধ্যেই ভার্চুয়াল কোনো কিছু অর্থের মাধ্যমে কেনার ব্যবস্থা। ভার্চুয়াল সেই জিনিসগুলো হতে পারে কোনো বোনাস, প্রিমিয়াম সামগ্রী, গেমের গোল্ড/অর্থ/কারেন্সি, বিভিন্ন থিম/স্কিন/টুলস/ক্যারেক্টারের পোষাক এবং গেমের বিভিন্ন লেভেল আনলক করা ইত্যাদি।
ইন-অ্যাপ পার্চেজ প্রায় সব ধরনের ফ্রি গেইমসগুলোর মধ্যেই দেখা যায়। গেইম ডেভেলপারদের মূল আয়ের উৎসই হলো এই ইন-অ্যাপ পার্চেজ। যেমন জনপ্রিয় গেইম প্লেয়ার আননোনস ব্যাটলগ্রাউন্ড মোবাইল সংক্ষেপে 'পাবজি মোবাইলে' আপনি অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে গেম কারেন্সি বা আপনার ক্যারেক্টারের জন্য নিত্য নতুন পোষাক ক্রয় করতে পারবেন যা অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা রূপ প্রদান করবে। আরেকটি জনপ্রিয় গেইম ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানসে আপনি অর্থ ব্যয় করে এটির প্রিমিয়াম কারেন্সি 'জেমস' ক্রয় করতে পারবেন। এধরনের অন্যান্য ভার্চুয়াল কারেন্সির আরো নাম হয়ে থাকে। যেমন গোল্ড, কয়েন, ডলার ইত্যাদী।

ইন-অ্যাপ পার্চেজের মাধ্যমে প্রচুর আয় করে থাকেন ডেভেলপাররা। ক্লাশ অফ ক্ল্যানের ডেভেলপার কোম্পানি সুপারসেল দিনে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছিলো শুধু তাদের ভার্চুয়াল কারেন্সি 'জেমস' বিক্রি করে। অন্যদিকে বর্তমানে পোকেমন গো ব্যবহারকারীরা দিনে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারব্যয় করে থাকে শুধু এই ইন-অ্যাপ পার্চেজ পদ্ধতি ব্যবহার করে।

ফ্রিমিয়াম আপসেল

প্লে স্টোরে গেলে হয়তো খেয়াল করে দেখবেন অনেক সময়েই একই অ্যাপের দুইটি ভার্সন থাকে। একটি 'লাইট' বা 'ট্রায়াল' অপরটি 'ফুল' ভার্সন। ট্রায়াল ভার্সনটিতে সীমিত সুবিধা বা মাঝে মাঝে সকল সুবিধাই দিয়ে দেয়া থাকে একটি নির্দিষ্ট ট্রায়াল পিরিয়ড পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা অ্যাপটির কিছু সুবিধা উপভোগ করে থাকেন। এরপর তারা যদি অ্যাপটির সকল সুবিধা আনলক করতে চান বা ট্রায়াল পিরিয়ড পার হয়ে যায় তারা তখন অ্যাপটির ফুল ভার্সন টাকা ব্যয় করে কিনে নিতে পারেন।
ট্রায়াল ভার্সনটি দেয়াই হয় ব্যবহারকারীদের সেই অ্যাপটি এবং তার সুবিধা সম্পর্কে জানান দেয়ার জন্য। সেটি ব্যবহার করে যদি তারা সন্তুষ্ট হন তাহলে তারা অ্যাপটির ফুল ভার্সন কিনে ব্যবহার করা শুরু করেন। এই পদ্ধতি নতুন কোনো অ্যাপের প্রচারণা ও ব্যবহারকারী বৃদ্ধির জন্য বেশ উপকারী। আপনাকে শুধু আপনার অ্যাপের সর্বোচ্চ সুবিধাটুকু সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের অবগত করতে হবে ট্রায়াল ভার্সনটি দিয়ে তারপর তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ফুল ভার্সনটি কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

সরাসরি পণ্যদ্রব্য বিক্রয়

ফ্রি অ্যাপস হলো ই-কমার্স বিজনেসের অন্যতম মাধ্যম। জনপ্রিয় অ্যাপস বা গেমস কোম্পানি তাদের ব্র‍্যান্ডেড পণ্যদ্রব্য তৈরি এবং সেগুলো বিক্রি করে থাকে সেই অ্যাপে বিজ্ঞাপন দিয়ে বা ইমেইল মার্কেটিং করে। পণ্যদ্রব্যগুলোর মধ্যে থাকতে পারে বিভিন্ন খেলনা, টি-শার্ট, ব্র‍্যান্ডেড ফোন কেস ইত্যাদী।
রোভিও হলো এমন একটি সফল কোম্পানি। তারা তাদের জনপ্রিয় অ্যাংরি বার্ডস গেমের মাধ্যমে পরিচিতি লাভের পর প্রতি মাসে এক মিলিয়নেরও বেশি নিজেদের ব্র‍্যান্ডেড টিশার্ট, ব্যাকপ্যাক এবং স্টিকার বিক্রি করে থাকে। এমনকি প্রতি মাসে তারা এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে শুধু তাদের অ্যাংরি বার্ডস পুতুলগুলো বিক্রি করেই
ফ্রি অ্যাপস থেকে ডেভেলপাররা কীভাবে টাকা আয় করে থাকেন ফ্রি অ্যাপস থেকে ডেভেলপাররা কীভাবে টাকা আয় করে থাকেন Reviewed by Admin on June 28, 2018 Rating: 5

ওয়েব ট্র্যাকিং: অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করবেন যেভাবে

June 24, 2018
https://assets.roar.media/assets/WsFwdmDxzUKo6kyV_CR-Magazine-Hero-Privacy-floor-grey-09-16.jpg?w=1080








পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রচারণা, প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভোক্তা/ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ প্রথম এবং প্রধান কাজ হিসেবে অগ্রাধিকার পায়। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় একজন ভোক্তা কী ধরণের পণ্যের ব্যাপারে আগ্রহী, কিংবা একজন ভোটার কোন দলকে সমর্থন করে, তা জানতে পারলে পণ্যের বিজ্ঞাপন বা ঐ ভোটারের কাছে নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারটি বেশ সহজ হয়ে যায়।
এছাড়াও অনলাইন ভিত্তিক নিউজ মিডিয়া, ভিডিও কন্টেন্ট মিডিয়া সহ সরাসরি পণ্য বিক্রি করে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এসব দিক বিবেচনায় সাধারণ মানুষের তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে প্রায় প্রত্যেকটি অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানই আগ্রহী। আর এই তথ্য সংগ্রহের প্রায়োগিক পন্থাই বর্তমানে ‘ওয়েব ট্র্যাকিং’ হিসেবে পরিচিত। 

ওয়েব ট্র্যাকিং বর্তমানে বেশ প্রচলিত একটি ধারণা। অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই জানে, তাদের ইন্টারনেট ভিত্তিক কর্মকাণ্ডগুলোতে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চোখ রাখে এবং প্রয়োজনে ব্যবহারকারীর প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ট্র্যাক করার ক্ষমতাও যে তাদের রয়েছে, সে ব্যাপারেও সবাই ওয়াকিবহাল। ফেসবুক-ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা ডাটা স্ক্যান্ডালের পর সবার কাছে এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ব্যবহারকারীর তথ্য বিক্রি করে মিলিয়ন ডলার রোজগারের সুযোগ কোম্পানিগুলোর রয়েছে।
এছাড়াও ই-কমার্স ভিত্তিক পণ্য ক্রয়-বিক্রয় সুবিধা সবার মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে, সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। আর এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু ভোক্তাদের পছন্দ, অপছন্দের উপর ভিত্তি করে সোশ্যাল মিডিয়া সহ ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, সেহেতু বলাই যায়, যে প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যবহারকারীর বেশি তথ্য থাকবে, সে প্রতিষ্ঠানই তাদের পণ্যগুলো ব্যবহারকারীর কাছে সবচাইতে দ্রুত এবং ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবে এবং প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। অর্থাৎ সাধারণ ব্যবহারকারীদের তথ্যগুলো আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও, প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এসবের উপযুক্ত মূল্য রয়েছে।


ফেসবুক-ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিক ডাটা স্ক্যান্ডেলের পর সবার কাছে এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ব্যবহারকারীর তথ্য বিক্রি করে মিলিয়ন ডলার রোজগারের সুযোগ কোম্পানিগুলোর রয়েছে; Image Source: Independent.co.uk

ওয়েব ট্র্যাকিং নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা থাকলেও এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল না। আর যেহেতু ট্র্যাকারদের কাছ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া টেকনিক্যালি বেশ ঝামেলার ব্যাপার, সেহেতু অনেকেই পুরো ব্যাপারটি এড়িয়ে যায়। কিন্তু ভাবুন একবার, আপনার প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডে অপরিচিত একজন চোখ রাখছে। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রয়োজনে ব্লাকমেলিং সহ নানা অনৈতিক কাজে সেগুলোকে ব্যবহার করছে। এমনকি টেকনোলোজির এই দুনিয়ায় আপনি খুব সহজেই পরিচয় জালিয়াতির শিকার হতে পারেন।
এছাড়াও বর্তমানে ভিসা, ব্যাংকিং সহ নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়মিত ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার সাথে সরাসরি জড়িয়ে আছে। এ ধরনের কাজে ব্যবহার করা তথ্যগুলো, যেমন- পাসওয়ার্ড, ব্যাংক ট্রাঞ্জেকশনে ব্যবহার করা কোড, বাসার ঠিকানা সহ প্রায় অধিকাংশই বেশ সংবেদনশীল। যেগুলো কোনো অসৎ লোকের কাছে পড়ামাত্রই আপনি সব হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারেন, হারিয়ে ফেলতে পারেন নিজের আসল পরিচয়। আর যেহেতু এ ধরনের কাজগুলো পুরোপুরি ওয়েব ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে সম্পাদন করার প্রয়োজন হয়, সেহেতু আপনার তথ্যগুলো খুব সহজেই ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আওতায় চলে যেতে পারে।


ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করার জন্য কোম্পানিগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে; Image Source: Freecodecamp.org

দিন যত যাচ্ছে, ওয়েব প্রযুক্তির উৎকর্ষতা তত বাড়ছে। পাশাপাশি আমার/আপনার তথ্য সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তিরও উন্নতি ঘটছে। অর্থাৎ কেউ চাইলেই পুরোপুরি ওয়ে.ব ট্র্যাকিং এড়িয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু যেহেতু ওয়েব ট্র্যাকিং প্রযুক্তি কুকিজ, ফ্ল্যাশ কুকিজ, সার্ভার লগ, ব্রাউজার ফিঙ্গার-প্রিন্ট এবং ওয়েব ব্যাকনসের মতো কিছু নির্দিষ্ট টার্মের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়, সেহেতু এগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা আপনাকে অনেকাংশেই ট্র্যাকারদের কুনজর থেকে নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

কুকিজ

কুকিজ হচ্ছে কিছু ছোট ছোট টেক্সট ফাইল, যেগুলো ব্রাউজারের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং ব্যবহারকারীর ডিভাইসে সংরক্ষিত থাকে। কোনো নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য ব্যবহারকারী যখন ব্রাউজারের মাধ্যমে ঐ ওয়েবসাইটের HTTP সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠায়, তখন ওয়েবসাইটটি ব্যবহারকারীর চাওয়া কন্টেন্টগুলোর সাথে সাথে তাদের ইচ্ছেমতো কিছু কুকিজ ব্রাউজারের উদ্দেশ্যে পাঠায়। ব্রাউজার তখন সেগুলো ক্যাশ মেমোরিতে সংরক্ষণ করে এবং সংরক্ষিত কুকিজের একটি কপি ঐ ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়।
পুরো প্রক্রিয়াটিতে মূলত নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের জন্য ব্রাউজার ব্যবহারকারীর ডাটাগুলোকে ভবিষ্যতে সহজে ব্যবহারের জন্য রেখে দেয়। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী ঐ ওয়েবসাইটের সাথে যত বেশি সংযুক্ত হবে, তত বেশি ওয়েবসাইটটি ব্যবহারকারীর কার্যকলাপ সম্পর্কে জানবে এবং কুকিজ আকারে ব্রাউজারের ক্যাশ মেমোরি কার্যকলাপগুলোর ডাটা সংরক্ষণের সাথে সাথে নিজেদের কাছেও একটি সংস্করণ রেখে দেবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে সহজেই লগইন করার জন্য ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের কাজটিও মূলত কুকিজ সেকশনে হয়ে থাকে।


কুকিজগুলোর ব্রাউজারের যেভাবে সংরক্ষিত থাকে; Image Source: robertheaton.com

আরো সহজ করে বলতে গেলে, আপনি যখন অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স সাইটগুলো ভিজিট করেন, তখন সেটি আপনার ব্রাউজারে একটি কুকিজ সেকশন তৈরি করে। ওয়েবসাইটটিতে আপনি কী খুঁজছেন, কোন পণ্যগুলো বেশি সময় ধরে দেখছেন, পছন্দের লিস্টে কোনগুলোকে যুক্ত করছেন, পণ্যগুলোর দামই বা কেমন সহ নানা ধরনের ডাটা সেই কুকিজ সেকশনে সংরক্ষিত থাকে। আপনি যখন অন্য কোনো সময় আবার আমাজনের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন, তখন সেটি ব্রাউজারে সংরক্ষিত কুকিজগুলোকে নিজেদের সার্ভারে নিয়ে বিচ্ছিন্ন সব তথ্যের ক্ষুদ্রাংশগুলোকে একটি নির্দিষ্ট ক্রমে সাজিয়ে, আপনি কী ধরনের পণ্যের ব্যাপারে আগ্রহী সেটি চিহ্নিত করবে এবং সে অনুযায়ী পণ্য দেখাবে।
আমাজনের মতো অন্যান্য ই-কমার্স সাইটগুলো একই পন্থায় সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কুকিজের ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে ইউটিউব, ইন্সট্রাগ্রাম, ফেসবুক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিনামূল্যে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একইভাবে ব্যবহারকারীর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে এবং তথ্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।


নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে সহজেই লগইন করার জন্য ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের কাজটিও মূলত কুকিজ সেকশনে হয়ে থাকে; Image Source: robertheaton.com

এ ধরনের কুকিজ সংগ্রহের ব্যাপারটি মূলত ফার্স্ট-পার্টি কুকিজ হিসেবে পরিচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের কুকিজ সংগ্রহের ব্যাপারটি সেবার মান বৃদ্ধির জন্য হয়ে থাকে। প্রায় অধিকাংশ জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে ফার্স্ট-পার্টি কুকিজ প্রথম থেকেই চালু থাকে; অর্থাৎ আপনি ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার সাথে সাথে কুকিজ সেকশনে আপনার কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য জমা হতে থাকে। অপরদিকে, কিছু কিছু ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর ইচ্ছা, অনিচ্ছা অনুযায়ী কুকিজ সংগ্রহ করে; অর্থা ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন পপ-আপ এবং অ্যালার্টের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে কী ধরনের তথ্যগুলো কুকিজ হিসেবে সংগ্রহ করছে, সেটি জানিয়ে দেয়। এমনকি, প্রয়োজনে ব্যবহারকারীকে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে ঐ ওয়েবসাইটটির জন্য কুকিজ অপশন চালু করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, থার্ড-পার্টি কুকিজনিয়ে।

ফার্স্ট-পার্টি বনাম থার্ড-পার্টি কুকিজ

ধরুন, আপনি nytimes.com নিউজ পোর্টালটি ভিজিট করেছেন। এখন ব্রাউজারের কুকিজ সেকশনে যদি nytimes.com এর জন্যই কুকিজ সংগ্রহ হয়, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটি ফার্স্ট-পার্টি কুকিজের আওতায় রয়েছে। অপরদিকে, আপনি nytimes.com ভিজিট করেছেন। কিন্তু কোনো একটি পপ-আপ অ্যাড কিংবা অন্য কোনভাবে ঐ ওয়েবসাইটটি free-news.com কে রেফার করলো এবং সেই সাথে free-news.com এর জন্য নতুন একটি কুকিজ সেকশনও তৈরি হয়ে গেল আপনার ব্রাউজারের ক্যাশ মেমোরিতে। সেক্ষেত্রে আপনার ডাটাগুলো থার্ড-পার্টি কুকিজের আওতায় চলে গেছে। অর্থাৎ, আপনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আরেকজন আপনার পছন্দ, অপছন্দ, যাবতীয় অনলাইন ভিত্তিক কর্মকাণ্ডগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।


ফার্স্ট-পার্টি এবং থার্ড-পার্টি কুকিজগুলোর ভিজুয়ালাইজেশন; Image Source: Freecodecamp.org

এক্ষেত্রে আপনি একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। প্রথমত, আপনার সব রকমের ব্রাউজিং ডাটা অবিশ্বস্ত কোনো সংগ্রাহকের কাছে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে, আপনি জানবেনও না, ঐ সংগ্রাহক আপনার ডাটাগুলো দিয়ে কী ধরনের অনৈতিক কাজ করছে। দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন ব্যাংকিং বা এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড যদি কুকিজ আকারে ব্রাউজারে সংরক্ষিত থাকে; অর্থাৎ আপনি যদি নির্দিষ্ট সাইটগুলো থেকে লগ-আউট না করে থাকেন, কিংবা কোনো লগইন সেশনের পরে পূর্বের কুকিজগুলো ডিলিট না করেন, তাহলে সেগুলোও থার্ড-পার্টি কুকিজ সংগ্রাহকদের সংগ্রহে চলে যেতে পারে।

ব্রাউজার ফিঙ্গার-প্রিন্টিং, কুকিজের চাইতেও ভয়াবহ

চাইলেই কোনো নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের জন্য কুকিজ বন্ধ করে রাখা যায়, নানা উপায়ে এড়িয়ে যাওয়া যায়। এছাড়া থার্ড-পার্টি কুকিজ ছাড়া নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার তেমন কারণও নেই।  কিন্তু ব্রাউজার ফিঙ্গার-প্রিন্টিং এক্ষেত্রে বেশ ভয়াবহ। ওয়েব ট্র্যাকিংয়ের এই পদ্ধতিতে ট্র্যাকাররা নির্দিষ্ট কিছু স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে, যেগুলোর সাহায্যে আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ অথবা যেসব ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করছেন, সেই ডিভাইসটির সব রকমের তথ্য ট্র্যাকারদের কাছে চলে যাবে।
ডিভাইসের মডেল, ব্রাউজারে ব্যবহৃত এক্সটেনশন, প্লাগ-ইন, অবস্থান, ভাষা, টাইমজোন, ডিভাইসের স্ক্রিন-রেজুলেশন, ইন্সটল করা ফন্ট সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ট্র্যাকাররা হাতিয়ে নিতে পারবে। এই পদ্ধতি এতটাই শক্তিশালী যে, কোনো ব্যক্তি যদি একের অধিক ডিভাইস ব্যবহার করে, আর সেগুলো যদি একই জায়গায় রাখা হয়, কিংবা একই নেটওয়ার্কের আওতায় থাকে, তাহলেও একটির সাহায্যে অন্যটির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করাও ট্র্যাকারদের জন্য সহজ হয়ে যায়।

সরাসরি একজন ব্যবহারকারীকে ট্র্যাক করা কি সম্ভব?

হ্যাঁ। আর সবচাইতে রোমাঞ্চকর ব্যাপার হচ্ছে, এজন্য সার্ভিস প্রোভাইডারদের কুকিজ কিংবা ব্রাউজার ফিঙ্গার-প্রিন্টিং এর মতো টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তখন সরাসরি ওয়েবসাইটের সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠান। আর প্রোভাইডাররা তাদের সার্ভার লগে আসা রিকোয়েস্টগুলো বিস্তারিত দেখেই আপনার আইপি এড্রেস, ডিভাইসের লোকেশন, ডিভাইসের নাম জেনে নিতে পারে। তবে কুকিজ, ব্রাউজার ফিঙ্গার-প্রিন্টিং এর মতো ব্যাপারগুলো আপনার ব্যাপারে তাদের আরো বেশি তথ্য জোগান দেয়।


ওয়েব ট্র্যাকিংয়ের পুরো প্রক্রিয়াটি যেভাবে সম্পাদিত হয়; Image Source: Freecodecamp.org 

প্রতিষ্ঠানগুলো কতজন ব্যবহারকারী তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করলো, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তারা মূলত দেখে, ব্যবহারকারীরা কীভাবে তাদের ওয়েবসাইটের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করছে, কত সময় ধরে ব্যবহার করছে, কোন কোন পেজ, ফিচার, প্রোডাক্টগুলোতে বেশি সময় দিচ্ছে, প্রথমবার ব্যবহারের পর আবার ফিরে আসছে কি না, আসলেও কত সময় পর, কতবার আসলো; এমনকি, ওয়েবসাইটে করা সার্চগুলোতে কী ধরনের কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে, সেদিকেও কোম্পানিগুলো নজর রাখে। পরবর্তীতে এসকল তথ্যের উপর ভিত্তি করেই প্রোডাক্ট, কন্টেন্ট, ইউজার ইন্টারফেস, ব্যবহৃত টেকনোলোজিগুলোতে পরিবর্তন আনে।

যে উপায়ে নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করবেন

পূর্বেই বলা হয়েছে, কন্টেন্ট মার্কেটিং থেকে শুরু করে ভোক্তাদের কাছে সঠিক পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া সহ সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীর তথ্যগুলোর ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকার চেষ্টা করে। ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ সহ নানা রকম তথ্য বিক্রির মাধ্যমেও বিশাল অংকের অর্থ উপার্জনেও তারা পিছু পা হয় না। এছাড়া থার্ড-পার্টি ওয়েব ট্র্যাকারদের ব্যাপারে যেহেতু কোন ব্যবহারকারীই ওয়াকিবহাল না, সেহেতু তাদের কাছে ব্যক্তিগত অতি ক্ষুদ্র তথ্য যাওয়াও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর ওয়েব ট্র্যাকিং থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণ পাওয়ারও সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে থার্ড-পার্টি কুকিজ সংগ্রাহক, ব্রাউজার ফিঙ্গার-প্রিন্টিং সহ অবিশ্বস্ত ওয়েব ট্র্যাকারদের হাত থেকে নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়।
আপনি যদি গুগল ক্রোম অথবা মজিলা ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে Adblock Plus এক্সটেনশনটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যানার, পপ-আপ বিজ্ঞাপনের মতো থার্ড-পার্টি কুকিজ সংগ্রহ করে এমন ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করে দেয়। সাথে সাথে ম্যালওয়ার, ট্র্যাকিং-স্ক্রিপ্টগুলো খুঁজে বের করে ব্লক করে দিতেও পারদর্শী।
উপরোক্ত কাজের জন্য Ghostery-ও বেশ জনপ্রিয়। এটি মূলত ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। অর্থাৎ, এক্সটেনশনটি প্রাথমিক অবস্থায় বিপদজনক ওয়েবসাইট, অ্যাডগুলোকে চিহ্নিত করবে। এরপর কোন ওয়েবসাইট, ওয়েব-অ্যাপ কাজ করবে, কোনটি করবে না সেটি ব্যবহারকারীর নির্দেশে উপর ভিত্তি করে সম্পাদন করবে।


গোস্টটেরি'র লগু; Image Source: ghostery

Do Not Track এক্সটেনশনটিও বেশ কাজের। এটি অ্যাডব্লক প্লাস, গোস্টেরির মতো কাজ করলেও, ইচ্ছাকৃতভাবে থার্ড-পার্টি কোনো অ্যাপের সাথে ডাটা বিনিময় করতে গেলেও বাধা প্রদান করবে। অর্থাৎ, আপনি যদি কোনো একটি ওয়েবসাইটে আপনার ফেসবুক, গুগল প্লাসের মাধ্যমে লগইন করতে চান, অথবা কোনো কন্টেন্ট মিডিয়া প্লাটফর্ম থেকে যদি অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম, যেমন: ফেসবুক, টুইটারে শেয়ার বাটন দ্বারা কিছু শেয়ার করতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে এক্সটেনশনটি বাধা প্রদান করবে।


স্মার্টফোনে গুগল ক্রোমের 'ইনকগনিটো মুড'; Image Source: techhive.com

গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ার ফক্স বেশ জনপ্রিয় হলেও অনেকেই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, মাইক্রোসফট এজ, ভিভালডি, অপেরা, সাফারির মতো ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও বর্তমানে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজিংও বেশ জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে, প্রত্যেকটি ব্রাউজিং সেশনের পরে সোশ্যাল মিডিয়া সহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলো থেকে লগ-আউট করেও নিরাপদ থাকা যায়। তাছাড়া, ব্রাউজিং ডাটাগুলো, যেমন: ব্রাউজিং হিস্টোরি, কুকিজ, ক্যাশ মেমোরিতে সংরক্ষিত ডাটাগুলো মুছে ফেলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি ব্রাউজারেই ‘ইনকগনিটো মুড’ বা 'ব্রাউজার ইন প্রাইভেট মুড' রয়েছে। ব্রাউজারগুলোর এই সেবাটি ব্যবহারের ফলে কুকিজ, ব্রাউজিং ডাটা, ক্যাশ সংরক্ষণ থেকে ব্রাউজারকে বিরত রাখে। সুতরাং, কোনো রকমের ডাটা ম্যানুয়ালি মুছে ফেলার ঝামেলা এড়ানো যায়। আর নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার সাথে নিজের পরিচয় পুরোপুরি লুকিয়ে ফেলার জন্য টর ব্রাউজার তো আছেই
ওয়েব ট্র্যাকিং: অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করবেন যেভাবে ওয়েব ট্র্যাকিং: অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করবেন যেভাবে Reviewed by Admin on June 24, 2018 Rating: 5

বিনামূল্যের বিকল্প সব সফটওয়্যার সম্ভার

June 22, 2018
https://assets.roar.media/assets/STZiXykmT5JrTTqU_kovar.jpg?w=1080

বিনামূল্যের বিকল্প সব সফটওয়্যার সম্ভার


আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকি। পিসিতে হোক বা স্মার্টফোনে, বিভিন্ন কাজ, টাস্ক বা কোনো আসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে এই সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামগুলোর কোনো বিকল্প নেই। 
এই প্রোগ্রামগুলো ব্যবহার করার জন্য আমরা অনেকক্ষেত্রেই শঠতা বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকি। আমরা বিভিন্ন সফটওয়্যারের পাইরেসিকপি ব্যবহার করি। এতে একদিকে যেমন সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি লোকসান গুনছে, আবার ঠিক তেমনি আমরা বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছি। অথচ এই পেইড প্রোগ্রামগুলোর পাইরেসি কপি অথবা ক্র্যাকড কপি ব্যবহার না করে খুব সহজেই আমরা বিনামূল্যে এসব প্রোগ্রামের বিকল্প ব্যবহার করতে পারি। আজকের লেখায় থাকছে বিনামূল্যের প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি প্রোগ্রাম সম্ভার। 
আসুন, আমরা সফটওয়্যার পাইরেসিকে 'না' বলি; Image Source: Shutterstock

ফ্রি অনলাইন স্টোরেজ

স্মার্টফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপে অফলাইন স্টোরেজের পাশাপাশি অনলাইন স্টোরেজ আজকাল বেশ জনপ্রিয়। উন্নত দেশগুলোতে বেশ আগে থেকে ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়ে আসলেও বর্তমানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেকেই অনলাইন বা ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করছেন। ক্লাউড স্টোরেজের অন্যতম প্রধান সুবিধা হচ্ছে, এই অনলাইন স্টোরেজে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ডকুমেন্ট ইত্যাদি জমা করে রাখলে পরবর্তীতে খুব সহজে পৃথিবীর যেকোনো কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোন থেকে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে এই ফাইল বা ডকুমেন্টগুলো ব্যবহার করা যায়।
আপনি যদি গুগল ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে গুগল ড্রাইভ অনলাইন স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গুগলের আরেকটি সার্ভিস ড্রপবক্সও বিকল্প একটি ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবস্থা হতে পারে। ফ্রি ব্যবহারকারী হিসেবে গুগল ড্রাইভ ১৫ গিগাবাইট এবং ড্রপবক্স ২ গিগাবাইট ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধা দিয়ে থাকে।
গুগল ড্রাইভ হতে পারে কার্যকরী অনলাইন স্টোরেজ; Image Source: CNET
অ্যাপল ব্যবহারকারীরা আইক্লাউডে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ৫ গিগাবাইট পরিমাণ তথ্য এবং ফাইল জমা করে রাখতে পারেন। এছাড়া, কেউ অ্যামাজন প্রাইম সদস্য হলে ৫ গিগাবাইট ক্লাউড স্টোরেজ এবং সীমাহীন ফটো স্টোরেজ সুবিধা পেতে পারেন। 

ফ্রি অফিস সফটওয়্যার

মাইক্রোসফট অফিস পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় অফিস সফটওয়্যার হলেও প্রোগ্রামটি কিন্তু ফ্রি নয়। আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকলেও কেউ চাইলে জনপ্রিয় এই সেবাটির বিকল্প ব্যবহার করতে পারেন, একদম বিনামূল্যেই।
LibreOffice মাইক্রোসফট অফিসের অন্যতম বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রোগ্রামটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং উন্মুক্ত। মাইক্রোসফট অফিসের যাবতীয় কাজ এই প্রোগ্রামটি দিয়ে বেশ ভালভাবেই করা সম্ভব। এছাড়া, মাইক্রোসফট অফিসের বিকল্প হিসেবে গুগলের জনপ্রিয় সেবা 'গুগল ডস' ব্যবহার করা যেতে পারে। মোবাইলবান্ধব এই প্রোগ্রামটি পিসিতেও সহজে ব্যবহার করা যায়। প্রোগ্রামটির ইন্টারফেস বেশ সহজ এবং ঝামেলাহীন।
Image Source: LibreOffice

ফ্রি ফটো এডিটিং সফটওয়্যার

'অ্যাডোবি' কোম্পানির ফটোশপসহ বেশ কিছু সফটওয়্যার ছবি সম্পাদনার জন্য পৃথিবীতে সবথেকে জনপ্রিয় হলেও অপ্রিয় সত্য এই যে, এই প্রোগ্রামগুলো কিন্তু একদমই ফ্রি নয়। সৎভাবে এই প্রোগ্রামগুলো ব্যবহার করতে চাইলে আমাদের অবশ্যই ডলার গুণতে হবে। কিন্তু ছবি সম্পাদনার জন্য এই ফটোশপের বেশ কিছু বিকল্প ভালো ফ্রি প্রোগ্রাম রয়েছে।
GIMP একটি উন্মুক্ত ছবি সম্পাদনার প্রোগ্রাম। ফটোশপের মতোই এই প্রোগ্রামটিতে ছবি সম্পাদনার জন্য প্রায় সব রকমের অপশনই রয়েছে। তাই কেউ চাইলে খুব সহজে এই প্রোগ্রামটি ডাউনলোড করে ছবি সম্পাদনার কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ছবি সম্পাদনার জন্য একদিকে যেমন কোনো অসৎ উপায় অবলম্বন করতে হবে না, আবার ঠিক তেমনি ছবি সম্পাদনার কাজগুলো আমরা সহজেই কাজ চালিয়ে নিতে পারবো। 

ফ্রি অডিওবুক

উন্নত দেশগুলোতে পেপারব্যাকের বিকল্প বিসেবে অডিওবুক অত্যন্ত জনপ্রিয়। অডিওবুকের বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, অন্য কোনো কাজ (যেমন- গাড়ি চালানো, জিম, অফিস ইত্যাদি) করার সময় খুব সহজেই অডিওবুক শোনা সম্ভব।
অডিবল এবং আইটিউন্স অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি অডিওবুক সেবা হলেও এই দুটি প্রোগ্রাম ফ্রিতে ব্যবহার করা আদৌ সম্ভব নয়। এই প্রোগ্রাম দুটির মাসিক কিংবা বাৎসরিক ফি বেশ চড়াই বটে! এক্ষেত্রে Overdrive নামের প্রোগ্রামটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রোগামটির বিশেষত্ব হচ্ছে, খুব সহজে আঞ্চলিক লাইব্রেরি অথবা একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত করা সম্ভব। প্রোগ্রামটিতে লাইব্রেরি কার্ড সংযুক্ত করার মাধ্যমে অডিওবুকের এক বিশাল সম্ভারে প্রবেশ করা সম্ভব।
এছাড়া আপনি যদি ক্লাসিক সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে LibriVox প্রোগামটি আপনার জন্য একটি বেশ ভালো মানের ফ্রি অডিওবুক সেবা হতে পারে।

ফ্রি ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট

আমরা প্রায়ই আমাদের বাসার ওয়াই-ফাই অথবা আমাদের প্রিয় স্মার্টফোনটিতে ইন্টারনেট স্পিড পরিমাপ করে থাকি। ব্যবহৃত ইন্টারনেট ঠিক কতটা সুস্থির, এই বিষয়টি ঠিকভাবে বোঝার জন্য এই স্পিড পরিমাপের কোন বিকল্প নেই। ইন্টারনেট স্পিড পরিমাপের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট Speedtest.net অথবা এই কোম্পানির ‘স্পিডটেস্ট’ অ্যাপটির মাধ্যমে আমরা খুব সহজে আমাদের ব্যবহৃত ইন্টারনেটের মান যাচাই করে নিতে পারি।
স্পিড টেস্ট সাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড মাপা সম্ভব; Image Source: Speed Test
ইন্টারনেটের মান যাচাই করার আরেকটি বেশ জনপ্রিয় সাইট হচ্ছে Fast.com। ভিডিও স্ট্রিমিং কোম্পানি নেটফ্লিক্সের মালিকানাধীন এই সাইটের মাধ্যমেও আমরা খুব সহজে ইন্টারনেটের গতি, মান, পিং ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়গুলো যাচাই করে নিতে পারি।

নাসার ফ্রি সফটওয়্যার এবং ছবি সম্ভার

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার এক বিশাল উন্মুক্ত সফটওয়্যার এবং ছবির সম্ভার হচ্ছে। আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এগুলোর অধিকাংশই বিনামূল্যে যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন।
Image Source: LogoDesignLove
মহাকাশ বিষয়ে নাসার যাবতীয় সাফল্যের পেছনে তাদের নির্মিত নানা এপ্লিকেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসার এযাবতকালের সামগ্রিক সাফল্যের অন্তত ৩০ ভাগ হচ্ছে তাদের বিস্ময়কর সব প্রোগ্রাম এবং এপ্লিকেশন। এছাড়া, নাসার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু এবং গ্রহের ছবি সংবলিত একটি বিনামূল্যের আর্কাইভও রয়েছে। মহাকাশ সম্পর্কে কেউ জানতে চাইলে বা পড়াশোনা করতে চাইলে খুব সহজে এই টুলগুলো এবং ছবি সম্ভার কাজে লাগাতে পারেন। 

ফ্রি সাউন্ড এডিটর

সাউন্ড এডিট করার জন্য বেশ কিছু ভালো প্রোগ্রাম রয়েছে। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার করতে হলে আমাদের প্রোগ্রামটি কিনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা বিনামূল্যে সাউন্ড এডিটের কাজ করতে চাইলে Audacity প্রোগ্রামটি ব্যবহার করতে পারি। উন্মুক্ত এই প্রোগ্রামটি বেশ ভালো মানের এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই প্রোগ্রামটিতে প্রয়োজনীয় সব ধরণের ফিচারই রয়েছে।
ফ্রি এই সফটওয়্যারটি দিয়ে সাউন্ড রেকর্ডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ দূরীকরণসহ ফ্রি পডকাস্ট সুবিধাও পাওয়া সম্ভব।

ফ্রি ফায়ারওয়াল

এন্টিভাইরাস অথবা ম্যালওয়্যার নিরাপত্তা প্রোগ্রামের পাশাপাশি আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটারকে হ্যাকার বা সাইবার আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে ফায়ারওয়াল প্রোগ্রামগুলোর ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যদিও উইন্ডোস পিসিগুলোতে নিজস্ব ফায়ারওয়াল প্রোগ্রাম দেয়া থাকে, এক্ষেত্রে কিন্তু বেশ কিছু বেশ ভালো মানের সফটওয়্যার রয়েছে।
TinyWall প্রোগ্রামটি বেশ ভালো মানের একটি ফায়ারওয়াল প্রোগ্রাম। বিনামূল্যের এই প্রোগ্রামটি পুরোপুরি উন্মুক্ত, হালকা এবং কম্পিউটারকে একদমই স্লো করে না। প্রোগ্রামটির অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে, প্রোগ্রামটি কোনো ধরনের বিরক্তিকর ম্যাসেজ প্রদর্শন না করেই নিজে থেকে যাবতীয় কাজ করে থাকে।
ফ্রি ফায়ারওয়াল প্রোগ্রাম হিসেবে ZoneAlarm-ও বেশ কার্যকরী। বিনামূল্যের প্রোগ্রাম হিসেবে এটিও যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন।

ফ্রি ভিডিও এডিটর

ভিডিও সম্পাদনার জন্য 'অ্যাডোবি' কোম্পানির বেশ কিছু প্রোগ্রাম অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও এগুলো মূলত ফ্রি নয়। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভিডিও সম্পাদনা করার জন্য বেশ কিছু বিনামূল্যের প্রোগ্রাম রয়েছে।
এক্ষেত্রে LightworksVSDC নামের বিনামূল্যের সফটওয়্যারগুলো দিয়ে ভালো মানের ভিডিও সম্পাদনা করা সম্ভব। উল্লেখ্য,  The Wolf of Wall Street’ এর মতো নামকরা চলচিত্র সম্পাদনার কাজে Lightworks ব্যবহার করা হয়েছিল।
লাইট ওয়ার্কস; Image Source: PC World
ঠিক এভাবে থ্রিডি ডিজাইনিং করার জন্য পেইড প্রোগ্রাম AutoCAD এর পরিবর্তে বিনামূল্যের প্রোগ্রাম SketchUp Make বা EasyHome Homestyler ব্যবহার করা যেতে পারে। বিনামূল্যের এই প্রোগ্রাম দুটি দিয়ে ব্যক্তিগত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।

ফ্রি গ্রামার চেক এবং লেখার প্রোগ্রাম

লেখার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকি। প্রোগ্রামটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও ফ্রি নয়। এক্ষেত্রে ইংরেজি লেখার জন্য আমরা অত্যন্ত জনপ্রিয় ফ্রি প্রোগ্রাম Grammarly ব্যবহার করতে পারি। প্রোগ্রামটির সুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে গ্রামারের ভুলগুলো খুব সহজে শুধরে নেওয়া সম্ভব।
Image Source: Tools and Toy
ইংরেজি লেখার ক্ষেত্রে Hemingway Editor প্রোগ্রামটিও বেশ জনপ্রিয়। দীর্ঘ বাক্য, কঠিন শব্দগুলো এই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে সরলীকরণ করা সম্ভব। এছাড়া, খুব সাধারণ ইন্টারফেসে লেখার জন্য FocusWriter প্রোগ্রামটি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিরক্তিহীন লেখার জন্য প্রোগ্রামটি পরিচিত।

ফ্রি অস্থায়ী ইমেইল সার্ভিস

অনেক সময়েই আমাদের ঠিক একবারের জন্য কোনো ইমেইল আড্রেস ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এসব ক্ষেত্রে আমরা আমাদের স্থায়ী ইমেইলটি ব্যবহার না করে ফ্রি অস্থায়ী ইমেইল সার্ভিস ব্যবহার করতে পারি। এক্ষেত্রে অস্থায়ী ইমেইল ব্যবস্থা হিসেবে Mailinator অথবা Maildrop ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিনামূল্যের বিকল্প সব সফটওয়্যার সম্ভার বিনামূল্যের বিকল্প সব সফটওয়্যার সম্ভার Reviewed by Admin on June 22, 2018 Rating: 5
Powered by Blogger.